চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান লস্কর দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে দুবাই ও কানাডায় বিলাসবহুল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। সমকালের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তিনি প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যাংকে তার নামে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।
দুবাই ও কানাডায় সম্পত্তি
লস্কর দুবাইয়ে ৬২টি অ্যাপার্টমেন্ট ও ভিলার মালিক, যার আনুমানিক মূল্য ৭১৫ কোটি টাকা। এছাড়া কানাডার টরন্টোতে তার তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ, কেম্পিনস্কি হোটেল এবং ওয়াদি আল সাফা-৭ প্রকল্পে তার বিলাসবহুল সম্পত্তি রয়েছে।
ব্যাংক ঋণ ও অর্থ পাচার
লস্কর এবি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পুরোনো জাহাজ আমদানির নামে অর্থ পাচার করেছেন। তার প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টারপ্রাইজ ও গ্র্যান্ড ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, পানামা ও লাইবেরিয়ার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে জালিয়াতি করে অর্থ পাচার করা হয়েছে। এবি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় তার ৩৯টি এলসি খোলা হয়, যার মাধ্যমে প্রায় ১৯০ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে।
দুদকের তদন্ত ও ক্লিন সনদ
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ২০১৮ সালে লস্করের অর্থ পাচারের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাঠায়। তবে দুদক তাকে ক্লিন সনদ দেয় এবং কোনো মামলা করা হয়নি।
ব্যাংকগুলোর অবস্থা
এবি ব্যাংকে লস্করের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকেও তার বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে। ব্যাংকগুলো তার বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করলেও উপযুক্ত ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
জাহাজভাঙা শিল্পের ক্ষতি
লস্করের মতো উচ্চ খেলাপিদের কারণে ব্যাংকগুলো জাহাজভাঙা শিল্পে অর্থায়ন কমিয়ে দিয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে জাহাজভাঙার সংখ্যা কমে ১৩২টিতে দাঁড়িয়েছে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
শেষ কথা
আশিকুর রহমান লস্করের অর্থ পাচার ও ঋণখেলাপির ঘটনা ব্যাংকিং খাতের দুর্বল তদারকি এবং দুর্নীতির চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। তার সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারি সংস্থাগুলোর কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
Social Plugin