"ধানমন্ডি ৩২: বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতীক কি এবার ধ্বংসের মুখে?"

 






শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা। তাকে "বঙ্গবন্ধু" (বাংলার বন্ধু) নামেও ডাকা হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর, তিনি বাংলাদেশে প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি, শেখ মুজিব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা (বাকসাল) চালু করেন, যা বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয় এবং রাষ্ট্র, সরকার এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন মুছে ফেলে।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫, একটি সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যা করা হয়। তবে, শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা তখন জার্মানিতে ছিলেন। তাদের দুইজনই বেঁচে ছিলেন এবং পরে ভারতে আশ্রয় নেন। ১৯৮১ সালে হাসিনা দেশে ফিরে এসে ধানমন্ডি ৩২ নামক বাড়িটিকে একটি যাদুঘরে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দেন। ১৯৯৪ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে উদ্বোধন করা হয়।

এই বাড়িটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এখানে মুজিব অনেক বিদেশি নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং নানা সময় দেশের রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছিল। তবে, এই বাড়িটি এখন এক বিতর্কিত জায়গায় পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং সহিংসতার ঘটনাগুলোর পর।

প্রতিবাদের পেছনে কি ছিল?

বর্তমানে, অনেক মানুষ শেখ মুজিবের বাড়িটিকে আওয়ামী লীগের শাসনের একটি প্রতীক হিসেবে দেখছেন। কিছু বিক্ষোভকারী দাবি করছেন, এই বাড়ি এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য স্থাপনা দেশের সাম্প্রতিক একনায়কত্ব এবং বিরোধীদের দমন-পীড়নের চিহ্ন। গত বছর শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে এই বাড়ি ধ্বংস করার জন্য প্রতিবাদ শুরু হয়।

বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২-তে হামলা চালায়, বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং এক্সকেভেটর দিয়ে ভাঙতে শুরু করে। এর ফলে বাড়ির কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায় এবং হাজার হাজার বিক্ষোভকারী উৎসাহিত হয়ে স্লোগান দেয়, “ফ্যাসিবাদের দুর্গ ভেঙে ফেলো!”

সরকারের প্রতিক্রিয়া:

সরকার এই হামলাকে "দুঃখজনক" বলে অভিহিত করেছে, তবে তারা দাবি করেছে যে এটি জনগণের ক্ষোভের ফল। তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যকে দায়ী করে, যেটি জনমানসে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছে। সরকার এখন একে রুখতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছে।

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত কী হবে?

এটা স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ এখন আর আগের মতো শক্তিশালী অবস্থানে নেই। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম এবং ছাত্ররা দলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থনের অভাব এবং এর রাজনৈতিক অবস্থান ধ্বংস হওয়ার চিহ্ন।

সাধারণভাবে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি অসন্তোষ এতটাই গভীর হয়ে গেছে যে, দলটির ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।